পিছন থেকে কে দেখছে?

 হরর অথবা থ্রিলার মুভিতে আমরা প্রায়ই দেখতে পাই যে, একা ঘরে বা অন্ধকার রাস্তায় ভিলেন শিকারের উপর নজর রাখছে। কিন্তু মাঝে মধ্যে এমন অনুভূতির স্বীকার আমরাও হই যখন বাস্তবে আমাদের উপর কেউ নজর না রাখলেও মনে হয় কেউ যেন আছে আশেপাশে, লুকিয়ে নজর রাখছে। কিন্তু কেন?

ক্লিনিক্যাল ও ফরেনসিক মনোবিজ্ঞানী লেসলি ডবসনের মতে এর পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। সাধারণত ভীতিকর বই, সিনেমা বা খবর আমাদের মস্তিষ্কে একটি বিস্তৃত বর্ণালী সৃষ্টি করে। এছাড়াও মানসিক চাপ, ট্রমাজনিত ও মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির কারণে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও সতর্কতা অবলম্বনের কারণে এমন অনুভূত হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু আরও চরম ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি প্যারানয়া এবং হাইপারভিজিলেন্স অনুভব করতে পারেন এবং প্রায়শই অন্তর্নিহিত মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা বা মস্তিষ্কের অসুস্থতার সাথে এটি সম্পর্কিত।
তবে, কখনো কখনো সত্যিই আমাদের উপর নজর রাখা হয়। দ্য ইউনিভার্সিটি অফ কগনিটিভ নিউরোসায়েন্সের পোস্টডক্টরাল রিসার্চ ফেলো হ্যারিয়েট ডেম্পসি জোনস লেখেন, মানব মস্তিষ্কের একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক রয়েছে যা শুধুমাত্র দৃষ্টি প্রক্রিয়াকরণের জন্য নিবেদিত। তাই আমরা স্বভাবতই ব্যক্তির দৃষ্টির প্রতি সংবেদনশীল। এই সংবেদনশীলতার কারণে আমাদের পেরিফেরাল ভিশন দিয়ে আমরা ইঙ্গিত বাছাই করতে পারি। যেমন বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমেও আমরা বুঝতে পারি যে, একজন ব্যক্তি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কখনো কখনো কেউ না দেখলেও, বাইরের উদ্দীপনা আমাদের ভয় বোধ করায় এবং আমাদের উপর নজর রাখা হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য আমরা চারপাশে তাকাই।
মনোবিজ্ঞানের জার্নাল ফ্রন্টিয়ার্সে 2023 সালের একটি গবেষণা অনুসারে, যারা মানসিক আঘাতমূলক ঘটনার সম্মুখীন হয়েছেন তাদের জন্য হাইপারভিজিল্যান্স একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হয়ে ওঠে যা বিপদ এড়ানোর মাধ্যমে ভবিষ্যতের মানসিক চাপের সম্মুখীন হওয়া থেকে আমাদের প্রতিরোধ করে। প্যারানয়া এবং উদ্বেগের মতো লক্ষণগুলি আমাদের মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা(মস্তিষ্কের ছোট বাদামের মতো দেখতে অংশ) প্রক্রিয়া করে। যদি এটি অত্যধিক সক্রিয় হয় বা শারীরিক ক্ষতি বা চলমান ট্রমা স্ট্রেস থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে এটি হুমকি বোঝার মতো উচ্চতর মানসিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তবে এই অতিরিক্ত সতর্কতা এবং প্রতিক্রিয়া হাইপারভিজিল্যান্স, প্যারানয়া এবং বিভিন্ন বিভ্রমের জন্য দায়ী। ক্রমাগত এইধরনের ঘটনা গুরুতর মানসিক সমস্যার কারণ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে এইরকম জটিল অবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Post a Comment

Previous Post Next Post