মহাকাশ থেকে সোলার এনার্জি পৃথিবীতে পাঠানো একটি অন্যতম সমাধান

 


জীবাশ্ম জ্বালানি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মহাকাশ থেকে সোলার এনার্জি পৃথিবীতে পাঠানো একটি অন্যতম সমাধান হতে পারে। দুবছর আগে এক্ষেত্রে সাফল্যও পেয়েছেন মার্কিন গবেষকরা। এবার মহাকাশ ভিত্তিক সৌরশক্তি উৎপাদনের পথে এগোচ্ছে জাপান।

প্রায় ১৮০ কেজির একটি স্পেসক্রাফট যা ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ কিলোমিটার উপরের লো আর্থ অরবিট থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করবে। স্পেসক্রাফটে সৌরশক্তি সংগ্রহের জন্য ২ বর্গমিটারের একটি অনবোর্ড ফটোভোলটাইক প্যানেল থাকবে। প্রাপ্ত শক্তি প্রথমে মাইক্রোওয়েভ রশ্মিতে পরিণত হবে এবং পৃথিবীতে থাকা রিসিভিং এন্টেনাতে বিম আকারে পাঠানো হবে। স্পেসক্রাফট এর গতি হবে ঘণ্টায় প্রায় ২৮০০০ কিলোমিটার। এই উচ্চগতির কারণে প্রাপ্ত সৌরশক্তি যথাযথভাবে ভূপৃষ্ঠে পাঠাতে অ্যান্টেনাগুলোকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হতে হবে। এই শক্তি পাঠাতে মাত্র ১ মিনিট সময় লাগলেও ব্যাটারিতে আবারও শক্তি জমা করতে কয়েকদিন লাগতে পারে। এখান থেকে ১ কিলোওয়াট শক্তি পাওয়া যাবে যা প্রায় এক ঘন্টার জন্য ডিশ ওয়াশারের মতো গৃহস্থালীর যন্ত্রপাতি চালানোর জন্য যথেষ্ট। স্পষ্টতই কমার্শিয়াল ইউজের জন্য এই শক্তি যথেষ্ট নয়।
OHISAMA নামের এই প্রকল্পটি ২০২৫ সালে শুরু হতে যাচ্ছে৷ জাপান ইতিমধ্যেই ভূপৃষ্ঠে সৌরশক্তির ওয়ারলেস ট্রান্সমিশনে সফল হয়েছে। ডিসেম্বরেই একটি বিমান থেকে এনার্জি ট্রান্সমিশন পরীক্ষার পরিকল্পনা করেছে জাপান। স্পেসক্রাফটের মতো সৌরশক্তিনির্ভর ফটোভোলটাইক সেল থেকেই শক্তি উৎপাদন করা হবে বিমানে এবং প্রায় ৫-৭ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে বিম করা হবে ভূপৃষ্ঠে।
এছাড়াও বিভিন্ন স্পেস বেসড সোলার পাওয়ার ডেমনস্ট্রেশন প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি, ডিফেন্স এডভান্সড রিসার্চ প্রজেক্টস এজেন্সি, ইউএস এয়ার ফোর্স সহ বিভিন্ন বেসরকারি স্টার্ট আপ কোম্পানি। সম্পূর্ণ ব্যাপারটাকে ফিকশনের বাস্তবায়ন মনে হলেও মহাকাশ ভিত্তিক সৌরবিদ্যুতের খরচ এবং পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে নাসা। প্রচলিত সৌর বা বায়ু শক্তির চেয়ে এ পদ্ধতিতে প্রতি কিলোওয়াটে খরচ ৫৬ সেন্ট বেশি। তাছাড়া স্পেসক্রাফট মহাকাশে পাঠাতে ব্যবহৃত রকেটগুলোও প্রচুর গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদন করবে। উদাহরণ হিসেবে যুক্তরাজ্যের CASSIOPeiA নামক কনসেপ্ট স্পেস বেসড সোলার পাওয়ার স্টেশনের কথা বলা যায়। গিগাওয়াট স্কেলে শক্তি উৎপাদনকারী এই পাওয়ার স্টেশনকে মহাকাশে পাঠাতে ৬৮টি স্টারশিপ প্রয়োজন হবে। ভূপৃষ্ঠে সৌর এবং বায়ু শক্তি সবসময় পাওয়া সম্ভব না। যেহেতু মহাকাশ-ভিত্তিক সৌর শক্তি আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল নয়, সেহেতু পর্যাপ্ত প্রযুক্তিগত উন্নয়ন হলে এই পদ্ধতিটি গ্রিন এনার্জি উৎপাদনে ফলপ্রসূ হতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post