বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (বিপিডি) একটি জটিল মানসিক অবস্থা


 বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার (বিপিডি) একটি জটিল মানসিক অবস্থা যেখানে মানসিক অস্থিরতার পাশাপাশি নিজের সাথে নিজেরই মতপার্থক্যের মতো লক্ষনগুলো দেখা যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১.৬% প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝেই এর প্রভাব দেখা যায়। (সাধারণত প্রারম্ভিক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়)

বি. পি. ডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিভিন্ন ধরনের উপসর্গের সম্মুখীন হন যা তাদের জীবনে বেশ যন্ত্রণার কারণ হতে পারে। এই লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছেঃ -
১. আবেগগত অস্থিরতা : বিপিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই তীব্র মেজাজ পরিবর্তন বা মুড সুইং এবং শূন্যতার অনুভূতি ( numb & emptiness) অনুভব করে থাকেন।
২. অস্থিতিশীল সম্পর্ক : তাদের কাছে এক মুহুর্তে কাউকে আদর্শ মনে হতে পারে পারে এবং পরমুহূর্তেই হঠাৎ করে বিশ্বাস করতে পারে যে সেই ব্যক্তি যথেষ্ট যত্ন করে না বা নিষ্ঠুর।
৩. হারিয়ে যাওয়ার ভয় ( fear of abandonment) : তাদের প্রতিনিয়ত মনে হতে পারে তাদের পছন্দের মানুষগুলো তাদের জীবন থেকে হারিয়ে যেতে পারে। সেই মানুষদের আচরণে বিন্দুমাত্র পার্থক্যও তাদের চিন্তার কারন হতে পারে। তাই বিপিডি আক্রান্ত ব্যাক্তিরা প্রতিনিয়ত নানারকম প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের পছন্দের মানুষদের মনোযোগ আকর্ষন করে রাখতে চায়।
৪. আবেগপ্রবণ আচরণ : এর মধ্যে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত খাওয়া-দাওয়া বা অতিরিক্ত খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
৫. আত্মঘাতীমূলক আচরণ : বিপিডি আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে আত্মঘাতী বা নিজেকে আঘাত করার আচরণ বেশ ভালভাবেই লক্ষনীয়।
বিপিডি-র সঠিক কারণ জানা না গেলেও, জেনেটিক, পরিবেশগত এবং সামাজিক কারণগুলির সংমিশ্রণ এর বিকাশে অবদান রাখে বলে মনে করা হয়। এগুলির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারেঃ -
পারিবারিক ইতিহাস এর দু:সহ স্মৃতি বা এরকম কোনকিছু এর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। শৈশবের আঘাত বা একাকিত্বের মতো অভিজ্ঞতাগুলিও একটি প্রধান কারন হতে পারে।আবেগ নিয়ন্ত্রণ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তনের কারনেও বিপিডি সংগঠিত হতে পারে।
বি. পি. ডি-তে আক্রান্ত অনেক মানুষ স্থিতিশীলতা অর্জন করতে পারে এবং চিকিৎসার মাধ্যমে পরিপূর্ণ স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফেরত আসতে পারে।চিকিৎসার বিকল্পগুলি হলঃ
১.সাইকোথেরাপি : ডায়ালেকটিক্যাল বিহেভিয়ার থেরাপি (ডিবিটি) অন্যতম কার্যকর চিকিৎসা, যা ব্যক্তিদের আবেগ পরিচালনা এবং আত্ম-ধ্বংসাত্মক আচরণ হ্রাস করার দক্ষতা শিখতে সহায়তা করে।
২. ওষুধ : যদিও বিপিডি-র জন্য বিশেষভাবে অনুমোদিত কোনও ওষুধ নেই, ওষুধগুলি বিষণ্নতা বা উদ্বেগের মতো সহ-ঘটনাগুলি পরিচালনা করতে সহায়তা করতে পারে।
৩. সাপোর্ট গ্রুপ : সহকর্মীদের সমর্থন মোকাবেলা করার মূল্যবান কৌশল প্রদান করতে পারে এবং বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি হ্রাস করতে পারে।
বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারের সাথে চলাফেরা করা একজন বিপিডি গঠিত মানুষের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তবে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং উন্নত চিকিৎসা পদ্ধতির সাহায্যে বিপিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা তাদের আবেগকে কন্ট্রোল করতে পারে এবং স্বাস্থ্যকর, আরও স্থিতিশীল জীবনযাপন করতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post